ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মিঠাছড়িতে বন্য হাতি হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন

রামুতে ‘নিরীহ লোকজনকে মামলায় জড়ানোয় গ্রামবাসীর ক্ষোভ’

রামু প্রতিনিধি :: রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বন্য হাতি হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তকালে গ্রামবাসী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হাতিটির মৃত্যুর কথা জানিয়ে এ মামলায় অহেতুক নিরীহ লোকজনকে জড়ানোর অভিযোগ করেছেন।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বন্যপ্রাণী অপরাধ ইউনিটের পরিচালক জহির উদ্দিন আকন এর নেতৃত্বে কমিটির অন্যান্যরা হলেন-সদস্য কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র কর্মকর্তা নুর জাহান মিল্কি।
বৃহষ্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খরইল্যাছড়ি শায়রাঘোনা এলাকায় তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাষাবাদে গ্রামবাসী জানায়-কৃষক নুরুল হক ধানক্ষেত বাচানোর জন্য রাতে বৈদ্যুতিক ভাল্ব এর আলো জালাতেন। ওই বৈদ্যুতিক খূঁটি হাতির গায়ে লেগে ভেঙ্গে পড়ে। এতে হাতিটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। হাতির গায়ে কোন গুলির চিহ্ন ছিলো না। এরপরও গুলি করার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বন বিভাগ সাজানো মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় নিরীহ ব্যক্তিকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে নিরীহ লোকজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করার ঘটনায় জড়িত বন বিভাগের কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেন।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বন্যপ্রাণী অপরাধ ইউনিটের পরিচালক জহির উদ্দিন আকন উপস্থিত গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন-বন্যপ্রাণী হত্যা মামলায় নিরীহ কাউকে হয়রানি করা যাবে না। তিনি বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।
কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন-নিহত হাতির ময়না তদন্তে গুলির চিহ্ন বা জখম পাওয়া যায়নি। তাই মামলায় গুলির অভিযোগে কাউকে জড়ানো হলেও এখন মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নিরীহ লোকদের বাদ দেয়া হবে।
তদন্তকালে উপস্থিত গ্রামবাসী আরো জানিয়েছেন- ১৫ নভেম্বর ধানি জমিতে স্থানীয়রা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত হাতি দেখতে পায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বন বিভাগ বাদি হয়ে ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। এরমধ্যে ৩ নং অভিযুক্ত হিসেবে দক্ষিণ মিঠাছড়ির কৃতি সন্তান একে আজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ এর নাম দেখে গ্রামবাসী অত্যন্ত বিষ্মিত, মর্মাহত ও হতবাক হয়েছেন। আবুল কালাম আজাদের জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে এলাকার একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মামলায় তাঁর নাম অর্ন্তভূক্ত করেছে।
এরআগে গত ১৭ নভেম্বর দেশের শীর্ষস্থাণীয় দৈনিক প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদপত্রে বিদ্যুতের শকে হাতির মৃত্যুর তথ্য এবং এ ঘটনায় নুরুল হক নামের একজনের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। উক্ত নুরুল হকের বাড়িতে ঘটনারদিন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা অভিযান চালালে তিনি পালিয়ে যান। কেবলমাত্র একজন কৃষকের দেয়া বিদ্যুতের শকে হাতিটির মুত্যু হলেও আবুল কালাম আজাদকে মামলায় জড়িয়ে দেয়ায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তারা আরো জানান-আবুল কালাম আজাদ একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি কিশোর বয়স থেকে এলাকায় সেবা ও জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে চাকরি ও ব্যবসা করেছেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের অন্ধকারাচ্ছন্ন চাইল্যাতলী এলাকায় একে আজাদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ মিঠাছড়ি ঘাটঘর এলাকায় তিনি বাড়ির পাশে একটি মসজিদে জমি দান এবং একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে এলাকার জনসাধারণকে সুশিক্ষিত করা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি জীবনে কোনপ্রকার অপরাধ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন, এমন নজির নেই। শুধুমাত্র আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদে অংশ নিতে পারে, এমন আশংকায় ইদ্বিগ্ন হয়ে এলাকার একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে তাঁকে এ মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। যে এলাকায় হাতির মৃত্যু হয়েছে সে এলাকায় আবুল কালাম আজাদের কোন জমি নেই। তাই হাতিকে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

পাঠকের মতামত: